সোহাগ মিয়া, মাধবপুর প্রতিনিধিঃ পূর্বাঞ্চলীয় রেলপথে শায়েস্তাগঞ্জের অংশে প্রকল্পের অধীনে দায়িত্বরত রেল ক্রসিংয়ের গেইট কিপারদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে গত পাঁচ মাসের অধিক সময় ধরে। এ অবস্থায় চাকরির অনিশ্চয়তাসহ কর্মক্ষেত্রে নানাবিধ সুবিধার কারণে রেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেইট কিপাররা তাঁরা পরিবার নিয়ে খুব অসহায় অবস্থায় আছেন। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে মন্তব্য করেন ভুক্তভোগী গেইট কিপাররা।
শায়েস্তাগন্জের অধীনে গ্যাসফিল্ড রেল ক্রসিংয়ের দায়িত্বরত ও শায়েস্তাগন্জ সেকশনের প্রকল্প গেইট কিপারের সভাপতি তোফাজ্জ্বল ইসলাম জানান, পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় শায়েস্তাগঞ্জের ১৪টি রেল ক্রসিংয়ে অন্তত ৩৮ জন গেইট কিপার দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু গত পাঁচ মাসের অধিক সময় ধরে বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় তাদের পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভুক্তভোগী রা বলছেন, ২০১৯ সালের ১৭ডিসেম্বর ১৩তম একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে রাজস্ব করার আশ্বাস ও রেলওয়ে শ্রমিকলীগ আয়োজিত ইফতার পার্টিতে প্রকল্প গেইট কিপারদের চাকুরী রাজস্ব ঘোষনার বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন রেলপথ মন্ত্রী জনাব, নুরুল ইসলাম সুজন।
ভুক্তভোগী গেইট কিপার মোঃ মাসুদ রানা বলেন, আমাদের পাঁচ মাসের অধিক ধরে বেতন ভাতা বন্ধ থাকার ফলে পরিবার নিয়ে খুব অসহায় অবস্থায় দিন পার করতে হচ্ছে। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংসারিক খরচ চালাতে ও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারপর ও আমাদের যেন রাজস্বকরণ করা হয়।
কাশিমনগর রেল গেইট কিপার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের চাকরির বয়স চলে গেছে। আমাদের পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন-বোনাস সহ আমাদেরকে যেন রাজস্বকরণ করা হয় সেই বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও রেলপথ মন্ত্রীর কাছে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য,গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ রেলওয়ে মান-উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের ১৮৮৯জন গেইট কিপারের চাকুরী রাজস্ব খাতে স্থায়ীকরনের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও রেলপোষ্য এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৮৮৯ জন গেইট কিপার রাজস্বকরন বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ পূর্ব ও পশ্চিম এর উদ্যোগে কমলাপুর রেলওয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরা অনির্দিষ্টকালের আমরন অনশন করি। অনশন চলাকালীন ১৫ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার ১৭তম দিনে বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিকলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুরে কুতুব আলম মান্নান, সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আজম খসরু, জাতীয় শ্রমিকলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও রেলওয়ে শ্রমিকলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির, সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব হবিবুর রহমান আকন্দ, জাতীয় শ্রমিকলীগের প্রচার ও প্রকাশনা ও রেলওয়ে শ্রমিকলীগের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ মেহেদী হাসান, বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ এফ সুমন, দপ্তর সম্পাদক শাহজাহান পাটোয়ারী সাজু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল হোসেন, এবং জাতীয় শ্রমিকলীগ ও রেলওয়ে শ্রমিকলীগের সকল নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়ে রেলওয়ে গেইট কিপারদের দাবীর সাথে একাত্বতা পোষন করেন।ও দাবী পূরনের আশ্বাস দিয়ে অনশন ভেঙে দেওয়া হয়।
এদিকে, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি নূরে কুতুব আলম মান্নান অনশনকারীদের আশ্বাস দিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আদেশ একনেক সভার নির্দেশনা মোতাবেক আগামী (০৩)তিন মাসের ভিতরে যদি রেলওয়ে গেইট কিপারদের দাবী পূরন না হয় তাহলে আমরা জাতীয় শ্রমিকলীগ রেলওয়ে গেইট কিপারদের সাথে একত্রিত হয়ে কঠোর আন্দোলন করতে বাধ্য হব।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, বাংলাদেশ রেলওয়ে শায়েস্তাগন্জ সেকশনের উর্ধতন কর্মকর্তা (PWI) মোঃ সাইফুল্লাহ বলেন, এ অধীনে প্রকল্পের আওতায় শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মুকন্দপুর পর্যন্ত ১৪টি রেল ক্রসিংয়ে অন্তত ৩৮ জন গেইট কিপার দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের বেতন পাঁচ মাসের অধিক ধরে বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শায়েস্তাগন্জ সেকশনের অধীনে প্রকল্পের আওতাধীন রেলওয়ে গেইট কিপাররা বেতন-ভাতা না পেয়ে শুধুমাত্র তাদের কে রাজস্ব করার দাবী নিয়ে ও দায়িত্ব পালন করছেন লেন্জাপাড়া,একাডেমি,নসরতপুর,অলিপুর,গ্যাসফিল্ড,শাহপুর,রতনপুর,নোয়াপাড়া,ইটাখোলা,শাহপুর,মনতলা,কাশিমনগর,তোফায়েল নগর,হরষপুর গেইট কিপারেরা।
এ ছাড়া ও সারাদেশে পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অন্তত ১ হাজার ৮৮৯ জন গেইট কিপার দায়িত্ব পালন করছেন।
Leave a Reply